রুকিয়া শরীয়াহ

রুকইয়া, রুকইয়াহ, রুকিয়া, রুকাইয়া সহ বিভিন্ন উচ্চারণ প্রচলিত রয়েছে, যার মূল হচ্ছে আরবি শব্দ (رقية)

রুকইয়াহ কি?

রুকইয়াহ অর্থঃ ঝাড়ফুঁক করা, মন্ত্র পড়া, তাবিজ-কবচ, মাদুলি... ইত্যাদি [১]
আর রুকইয়াহ শারইয়্যাহ (رقية شرعية) মানে শরিয়াত সম্মত রুকইয়াহ, কোরআনের আয়াত অথবা হাদিসে বর্ণিত দোয়া দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা [২]
তবে রুকইয়া শব্দটি দ্বারা সচরাচর ঝাড়ফুঁক করা বুঝায়, এই ঝাড়ফুঁক সরাসরি মানুষের ওপর হতে পারে, অথবা কোনো পানি বা খাদ্যের ওপর করে সেটা ব্যাবহার করা হতে পারে। এক্ষেত্রে রুকইয়ার পানি, অথবা রুকইয়ার গোসল ইত্যাদি পরিভাষা ব্যবহার হয়। আর সবগুলোই সালাফে সালেহিন থেকে প্রমাণিত।

ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি

শরঈ বিধান

“রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রুকইয়াতে যদি শিরক না থাকে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই।”[৩]

বিশুদ্ধ আক্বিদা

উলামায়ে কিরামের মতে রুকইয়া করার পূর্বে এই আক্বিদা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া উচিত ‘রুকইয়া বা ঝাড়ফুঁকের নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই, সব ক্ষমতা আল্লাহ তা’আলার, আল্লাহ চাইলে শিফা হবে, নইলে নয়।’

রুকইয়া প্রকারভেদ

বিভিন্ন ভাবে রুকইয়া করা হয়, যেমনঃ দোয়া বা আয়াত পড়ে ফুঁ দেয়া হয়, মাথায় বা আক্রান্ত স্থানে হাত রেখে পড়া হয়। এছাড়া পানি, তেল, খাদ্য বা অন্য কিছুতে দোয়া/আয়াত পড়ে ফুঁ দিয়ে খাওয়া বা ব্যাবহার করা হয়। [৪]

বদনজরের জন্য রুকইয়াহ

যদি বুঝা যায় অমুকের জন্য নযর লেগেছে, তাহলে তাকে অযু করতে বলুন, এবং ওযুর পানি গুলো আক্রান্তের গায়ে ঢেলে দিন। তারপর ভালো পানি দিয়ে গোসল করুন। এতটুকুতেই ভালো হয়ে যাবে ইনশা-আল্লাহ। [৫]
আর সেলফ রুকইয়া (নিজের জন্য নিজের রুকইয়া করা) হচ্ছে, প্রথমে বদনজরের (Evil Eye) রুকইয়ার তিলাওয়াত এক বা একাধিকবার শুনতে হবে। (ডাউনলোড পেইজ দ্রষ্টব্য[৬]) শোনার সময় যেন ঘুমিয়ে না যান খেয়াল রাখবেন। আর এরপর রুকইয়ার গোসল করবেন। এভাবে কয়েকদিন করবেন।
সমস্যা সমাধান হতে ৩ থেকে ২১ দিন লাগতে পারে। কখনো ১দিনেও ভালো হয়ে যায়, তবে ভালো হওয়ার পরেও কয়েকদিন করা উচিত।

রুকইয়ার গোসল

গোসলের নিয়মঃ একটা বালতিতে পানি নিবেন, তারপর ওই পানিতে দুইহাত ডুবিয়ে ‘দরুদ শরিফ, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা ইখলাস, ফালাক্ব, নাস, শেষে আবার কোনো দরুদ শরিফ’ এসব ৭বার করে পড়বেন। পড়ার পর হাত উঠাবেন, এবং পানি দিয়ে গোসল করবেন। (এগুলা পড়ে পানিতে ফু দিবেন না, এমনিই গোসল করবেন। যদি টয়লেট আর গোসলখানা একসাথে হয় তখন এসব অবশ্যই বাহিরে এনে পড়বেন। প্রথমে এই পানি দিয়ে গোসল করে তারপর অন্য পানি দিয়ে ইচ্ছামত গোসল করবেন।)

জ্বিনের আসর (jinn possession) এর জন্য রুকইয়াহ

যিনি রুকইয়া করবেন তিনি প্রথমে সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে নিজের শরীরে হাত বুলিয়ে নিবেন। এরপর রুকইয়া শুরু করবেন। জ্বিনের রুগীর ক্ষেত্রে সাধারণত কথাবার্তা বলে জ্বিন বিদায় করতে হয়, এক্ষেত্রে যিনি রুকইয়া করবেন তাঁকে উপস্থিতবুদ্ধির পরিচয় দিতে হবে। ঘাবড়ানো যাবেনা। রুগীর মাথায় হাত রেখে অথবা (গাইরে মাহরাম হলে) পাশে বসে জোর আওয়াজে রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়তে থাকুন।
রুকইয়ার অনেক আয়াত আছে, তবে স্বভাবিকভাবে সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ফালাক, নাস, সুরা মু’মিনুনের ১১৫-১১৮ নং আয়াত, সুরা সফফাত এর প্রথম ১০ আয়াত পড়তে পারেন। ইনশাআল্লাহ যথেষ্ট হবে। জ্বিন ছেড়ে দেয়া পর্যন্ত এগুলো বারবার পড়তে হবে আর ফুঁ দিতে হবে, অথবা রুগীর মাথায় হাত রেখে পড়তে হবে। তাহলে ইনশাআল্লাহ জ্বিন পালাতে বাধ্য হবে।

বাড়িতে জ্বিনের উৎপাত থাকলে

বাড়িতে জ্বিনের কোনো সমস্যা থাকলে পরপর তিনদিন সুরা বাক্বারা তিলাওয়াত করতে হবে, তাহলে ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে। তিলাওয়াত না করে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা কয়েকবার যদি সুরা বাক্বারা প্লে করা হয় তাহলেও ফায়দা পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। তবে সবচেয়ে ভালো ফল পেলে তিলাওয়াত করা উচিত।

যাদু আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য রুকইয়াহ

যাদুর প্রকারভেদ অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার রুকইয়া করা হয়। তবে কমন সেলফ রুকইয়া হচ্ছে-
প্রথমে সমস্যার জন্য নিয়াত ঠিক করে নিন, ইস্তিগফার দরুদ শরিফ পড়ে শুরু করুন। এরপর একটি বোতল ভর্তি পানি নিয়ে "সুরা আ'রাফ ১১৭-১২২, ইউনুস ৮১-৮২, সুরা ত্বহা ৬৯" আয়াতগুলো পড়ে ফুঁ দিন।
১.[৭]
وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ ۖ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ (117) فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ (118) فَغُلِبُوا هُنَالِكَ وَانقَلَبُوا صَاغِرِينَ (119) وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ (120)قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِينَ (121) رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُونَ (122)
২.[৮]
فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُم بِهِ السِّحْرُ ۖ إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ (81) وَيُحِقُّ اللَّهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ (82)
৩.[৯]
وَأَلْقِ مَا فِي يَمِينِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوا ۖ إِنَّمَا صَنَعُوا كَيْدُ سَاحِرٍ ۖ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَىٰ (69)
৪. এরপর সুরা ফালাক্ব, সুরা নাস ৩বার পড়ে ফুঁ দিন।
তিন থেকে সাতদিন সকাল-বিকাল এই পানি খেতে হবে, আর গোসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করতে হবে। আর ৩/৪ সপ্তাহ প্রতিদিন কমপক্ষে দুইঘণ্টা রুকইয়া শুনতে হবে। একঘণ্টা সাধারণ রুকইয়া, আর একঘণ্টা সুরা ইখলাস, ফালাক, নাসের রুকইয়াহ। (অডিও ফাইলের জন্য ডাউনলোড পেইজ দ্রষ্টব্য[৬]) আর পাশাপাশি তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহর কাছে দোআ করতে হবে।
বেশীরভাগ ক্ষেত্রে প্রথম সপ্তাহেই উন্নতি টের পাওয়া যায়, তবে এরপরের কয়েক সপ্তাহ একঘন্টা করে হলেও রুকইয়া শুনে যেতে হবে। বাদ দেয়া যাবে না। তাহলে ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুতই সুস্থ হয়ে যাবে। সমস্যা যদি দুই-তিন সপ্তাহ পরেও ভালো না হয়, তবে আবার অনুরূপ করতে হবে।

যাদুর জিনিশ অথবা তাবিজ খুঁজে পেলে

কি দিয়ে যাদু করেছে যদি পাওয়া যায়, অথবা সন্দেহজনক কোন তাবিজ পেলে উপরে বলা আয়াতগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে যাদুর জিনিশগুলো ডুবিয়ে রাখতে হবে কিছুক্ষণ, তাহলে ইনশাআল্লাহ যাদু নষ্ট হয়ে যাবে। [১০]

যাদু আক্রান্ত হলে বুঝার উপায়

রুকইয়ার আয়াতগুলো যাদু আক্রান্ত ব্যক্তির ওপর পড়লে, অথবা রুকইয়ার আয়াতের অডিও রেকর্ড শুনলে যাদুগ্রস্তের অস্বাভাবিক অনুভূতি হয়। যেমন, পেট ব্যথা করে, বুক ধড়ফড় করে, প্রচণ্ড মাথাব্যথা হয় ইত্যাদি।

রুকইয়ার আয়াত

কোরআন মাজিদের বিভিন্ন আয়াত দ্বারা রুকইয়া করা হয়, তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ কিছু আয়াত হচ্ছে[১১]
  1. সুরা ফাতিহা
  2. সুরা বাকারা ১-৫
  3. সুরা বাকারাহ ১০২
  4. সুরা বাকারাহ ১৬৩-১৬৪
  5. সুরা বাকারাহ ২৫৫
  6. সুরা বাকারাহ ২৮৫-২৮৬
  7. সুরা আলে ইমরান ১৮-১৯
  8. সুরা আ'রাফ ৫৪-৫৬
  9. সুরা আ'রাফ ১১৭-১২২
  10. সুরা ইউনুস ৮১-৮২
  11. সুরা ত্বহা ৬৯
  12. সুরা মু'মিনুন ১১৫-১১৮
  13. সুরা সফফাত ১-১০
  14. সুরা আহকাফ ২৯-৩২
  15. সুরা আর-রাহমান ৩৩-৩৬
  16. সুরা হাশর ২১-২৪
  17. সুরা জিন ১-৯
  18. সুরা ইখলাস
  19. সুরা ফালাক
  20. সুরা নাস

--উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

No comments:

Post a Comment